Header Ads

নেপাল ভ্রমন।। অক্টোবর -২০২৩।। খরচসহ বিস্তারিত

 নেপাল ট্রিপ - ১ম দিন | ঢাকা - কাঠমান্ডু

মঙ্গলবার, অক্টোবর ৩, ২০২৩


স্বভাবমত ১ ঘণ্টা লেটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর ফ্লাইট BG 373 ঢাকা শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে উড়াল দিল বিকেল ৫.৩০ এ। ঘণ্টাখানেক পরেই পৌঁছে গেল কাঠমাণ্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। 


পোঁছে দেখি বাইরে মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝপথে বেশ টার্বুলেন্স হচ্ছিল। এরপর ভাল ছিল। ল্যাণ্ড করার আগে আবার কিছুটা টার্বুলেন্স হচ্ছিল। অক্টোবর-নভেম্বর নাকি নেপাল ভ্রমনের শেষ্ঠ সময়। এসময় বৃষ্টি থাকে না, আকাশ পরিস্কার থাকে, পাহাড়ের ভিউ স্পষ্ট দেখা যায়। তাই প্ল্যান করে অক্টোবরে আসা। এখন তো দেখছি কপাল খারাপ! পাইলট মাঝপথে ঘোষণা করছিল, কাঠমাণ্ডুতে সামান্য বৃষ্টি হচ্ছে। এই হচ্ছে সামান্যের নমুনা!


১০ দিনের ট্রিপে এলাম নেপাল। ফিটনেস বেশি ভালো না। তাই কোন ট্র্যাকিং করব না। এটা শুধুই কালচারাল ট্রিপ। ঘুরে দেখব কাঠমাণ্ডু, বান্দিপুর, পোখারা, এবং নগরকোট। দূর থেকে উঁকি দিয়ে পাহাড় দেখা। সেই সাথে পোখারার কাছে ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রাম ধামপুস এবং অষ্ট্রেলিয়ান ক্যাম্পে দুই দিনের ছোট একটা ট্র্যাকিং। 


ছয়দিনের একটা ট্র্যাকিং-এ যাওয়ার প্ল্যান ছিল পুনহিলে, সময়ের অভাবে সেটা বাদ দিতে হয়েছে। ভালই হয়েছে। ওটাতে গেলে আর নেপালের অন্য কিছু দেখা হতো না। পরের বার ফুল ফিটনেস নিয়ে আসব, অন্যপূর্না বা এ্যাভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্র্যাকিং করব পুরোটা ইনশাআল্লাহ্! 


এই ট্রিপে যাওয়ার কথা ছিল ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর । অফিসের এক ঝামেলায় সেই প্ল্যান বাতিল করে দিতে হয়েছে। ঝামেলা শেষ হওয়ার পরে ফ্লাইটের দামও হু হু করে বেড়ে গেছে। পর্যটন মেলা উপলক্ষে বিমান সবসময় একটা ছাড় দেয়। ২৬ সেপ্টেম্বর কৌতুহল বশতঃ বিমানের ওয়েবসাইটে চেক করে দেখি আসলেই তারা ১০% ছাড় দিচ্ছে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে। কাঠমাণ্ডু যাওয়ার ২য় একটা ফ্লাইট চালু করেছে। সেই ফ্লাইটে ৩৬/৪৫ হাজারের রেগুলার সব টিকেটের ভীড়ে ডিসকাউন্ট সহ ২৭,৬০৮ টাকায় একটা টিকেট দেখাচ্ছে যদি ৩ অক্টোবর যাই আর ১২ বা ১৪ অক্টোবর ফেরত আসি! ১২ তারিখ পর্যন্ত ফ্রী আছি, তাই সাথে সাথে সেখানেই টিকেট কনফার্ম করে ফেলি।


২৮ অক্টোবর যাই পাসপোর্টে ক্যাশ ডলার এ্যানডোর্স করাতে, ইমিগ্রেশনে ঝামেলা এড়ানোর জন্য, যদিও একটা ক্রেডিট এবং প্রিপেইড কার্ড পাসপোর্টে এ্যানডোর্স করা আছে। বাসার কাছেই একটা মানি এ্যাক্সচেঞ্জ আছে। সেটা দুদিন যাবত দেখছি বন্ধ। এদের উত্তরা ব্রাঞ্চে সেদিন ডলা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অভিযানে। একজনকে এ্যারেস্টও করেছে। মনে হয় সেই কারনেই। 


গেলাম উত্তরা। দেখি এদের মেইন ব্রাঞ্চটাও বন্ধ। অনেকগুলো মানি এ্যাক্সচেঞ্জে জিজ্ঞেস করলাম। কেউ এ্যানডোর্স করতে পারবে না। কারন বাংলাদেশ ব্যাংকের খাতায় তাদের কারো ডলার ব্যালেন্স নেই। অনেক খুঁজে একটা পাওয়া গেল। ২০০ ডলার এ্যানডোর্স করাতে ৩৫০ টাকা নিল। জিজ্ঞেস করলাম, ডলার এখন কত করে কিনছে? বলল, সরকারের নিয়ম মেনে সরকারী রেট ১১১.৫০ টাকা করে। আরেক কাস্টমার আসল ডলার কিনতে। দাম চাইল ১১৮ টাকা করে। সেখানে আর সরকারী আইন মানার দরকার হচ্ছে না! এ্যানডোর্সমেণ্টে ডলারের রেইট দেখিয়েছে ১১৩ টাকা করে।


এর মধ্যে একটা ছোট ব্যাকপ্যাক আর কতগুলো কুইক-ড্রাই টিশার্ট কিনে ফেলি। ৪৫ লিটারের বড় একটা ব্যাকপ্যাক আর জুতা আগেই কিনেছিলাম। এক জোড়া ট্র্যাকিং সুজ কিনতে চেয়েছিলাম। কোথাও পেলাম না। বাটাতে কয়েকটা পেলাম, সেগুলো ১০০ ডলার প্রাইসের জুতা মনে হলো না। তাই আর কিনলাম না। পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ট্রাভেল রিলেটেড দরকারী কোন জিনিসই পেলাম না। বসুন্ধরা সিটিতে মুস্তাফা মার্টে বেশ ভাল ভাল জিনিস পাওয়া যেত। সেটা কয়েকদিন আগে বন্ধ হয়ে গেছে। উত্তরায় ডিক্যাথলন ছিল। সেটা তো আরো আগেই গেছে। পিক৬৯-এও শেলফ সব খালি। ডলারের ক্রাইসিসে কেউই বোধ হয় কিছু ইমপোর্ট করতে পারছে না।


এরই মধ্যে নেপাল ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে ভিসা প্রি-এ্যারাইভাল এ্যাপ্লিকেশন করে কনফার্মেশন প্রিণ্ট আউট করে নিয়েছিলাম। ফ্লাইট যদিও ১০ দিনের, ভিসার আবেদন করি ৩০ দিনের। ফ্রী যেহেতু দিচ্ছে, সমস্যা কি! থাকুক ৩০ দিনের ভিসা। বলা তো যায় না কাজে লাগে কি না!


৩ অক্টোবর বিকেল ৪.৩০ এ ফ্লাইট। ঘরের পাশেই এয়ারপোর্ট। ১.৩০ টার মধ্যেই এয়ারপোর্টে চলে আসলাম। পাসপোর্টে ১০০/- টাকা রেখেছিলাম বিসনেস ক্লাস গেইট দিয়ে ঢুকে যাব বলে। তার আর দরকার হলো না। গেইট একটা দেখলাম একদম ফাঁকা। ঢুকে পড়লাম। আমিই একমাত্র যাত্রী। ১০০/- টাকা বেঁচে গেল। 


বিমানের চেক-ইন কাউন্টারে হিমালয়ান এয়ারের যাত্রীরা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। সবার আগে গিয়ে বোর্ডিং পাস নিয়ে নিলাম। ব্যাকপ্যাকের ওজন ২ কেজি বেশি ছিল। পারসোনাল ব্যাগের ওজনও ৪ কেজির বেশি। টেনশনে ছিলাম, চেক-ইনে দিতে বলে কি না। ক্যারি-অন লাগেজের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেসই করল না!


এক যাত্রীকে বললাম একটা ছবি তুলে দিতে। বলে ভাই টেনশানে আছি। কি টেনশন? রিটার্ন টিকেট খুঁজে পায়না কাউন্টারে। দেখি টিকেট? চেক করে দেখি হিমালয়ানের টিকেট। বললাম, হিমালয়ান কাউন্টার দেখিয়ে দিচ্ছি, আগে ছবি তুলে দেন। দিল তুলে। তাকে হিমালয়ান কাউন্টারে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ইমিগ্রেশনে আসলাম।


ইমিগ্রেশনে প্রতিবারই ঝামেলা হয়, কারন আমি ইউরোপ যাওয়ার টিকেট করি ভিসার মেয়াদ শুরু হওয়ার আগের দিনে! এবার যদিও সামনে খিটখিটে অফিসার মনে হচ্ছে, কিন্ত ঝামেলা হলো না কোন। যদিও সব কাগজপত্র হাতে নিয়ে প্রস্তুত ছিলাম। তিনটা প্রশ্ন করল শুধু। 


- ব্যাবসা করেন? জ্বি।

- কত দিনের জন্য যাচ্ছেন? ১০ দিন।

- পারপাস? ট্যুরিজম।


বলতেই ছবি তুলে সীল দিয়ে ছেড়ে দিল। 


হাতে যথেষ্ট সময় আছে। গরীব যাত্রী, লাউঞ্জের এ্যাকসেস নাই কোন। থাকলেও বোধ হয় সেদিকে যাওয়া হতো না। এয়ারপোর্টের আগামাথা বেশ কয়েকটা চক্কর দিলাম। ট্রাইপড বের করে নিজের ছবি নিজেই তুললাম। কয়েকদিন আগেই দারুন এই ট্রাইপডটা কিনেছিলাম। বই-এর দোকানটায় ভদ্রমহিলার খোঁজ নিলাম। গতবার ইউরোপ যাওয়ার সময় বলেছিল পজিশন চেঞ্জ করবে দোকানের। বলল এখনো করতে পারে নাই। আর চেষ্টাও করছে না। কারন এখন টার্গেট নতুন টার্মিনালে যাওয়া। শুভকামনা জানালাম। এখন দেখলাম বইয়ের সাথে খাবার বিক্রি শুরু করেছে। ভাল আইডিয়া!


বোর্ডিং গেইটে এসে খবর নিলাম। খুলতে আরো কিছুক্ষণ দেড়ি আছে। সবগুলো গেইট চক্কর দিয়ে দেখে আমার ফ্লাইটের জন্য নির্ধারিত ৯ নাম্বার গেইটে এসে দাঁড়ালাম। সবার আগে সিকিউরিটি পার হয়ে ঢুকলাম। সব গুছিয়ে কিছুক্ষণ বসার পরেই বিমানের লোকজন ডাকা শুরু করল, সবাই চলে আসেন। ভাবলাম বোর্ডিং এর জন্য ডাকছে। বলে না, গেইট চেইঞ্জ, ৫ নাম্বার গেইটে যান। আবার সিকিউরিটি পার হতে হবে ভেবে হতাশ লাগল। কিন্তু সেটা আর দরকার হলো না। তারা শুধু ব্যাগ স্ক্যান আর বডি চেক করেই ঢুকতে দিল। 


৪.১৮ মিনিটে বোর্ডিং-এর জন্য ডাকল। সবার শেষে গিয়ে বাসে উঠলাম। সিকিউরিটি চেক করিয়েছিলাম সবার আগে। প্লেনের বাসে উঠলাম সবার পরে। এরপরও একজন দৌড়ে এসে উঠল। স্টুডেণ্ট। বলল ইমিগ্রেশনে আটকে রেখেছিল ৩ ঘণ্টা। প্রথম বার বিদেশ যাচ্ছে দেখে ছাড়তে চায় নাই, শেষ মুহুর্তে ছেড়েছে। আরো দশজনকে নাকি ছাড়েই নাই! তার মধ্যে একজন সিঙ্গাপুরে এক বছর থেকে এসেছে। তাকে বলেছে এক বছর যথেষ্ট না।


প্লেনে উঠলাম সবার শেষে। মাথার উপরে ব্যাগেজ বিন সব দখল হয়ে গেছে। ঠেলেঠুলে জায়গা করে নিজের ব্যাকপ্যাক ঢুকালাম। এরপর জানালার পাশে আগে থেকে সিলেক্ট করা সীট 25A তে বসলাম।


প্লেন ফুল। আমার ধারনা ছিল, নেপাল সবাই ঘুরার জন্যই যায়। আশ্চর্যের বিষয়, আশেপাশে যারা বসেছে কেউই হলিডে মুডে নেই। মুখে হাসি নেই, টেনশনে চোখমুখ খাদে ঢুকে গেছে। খটকা লাগলো। পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলাম, কই যাবেন? নেপালই, না অন্য কোথাও? বলে, আমাদের লোক আছে নেপালে। মালয়েশিয়া যাব সেখান থেকে। কত খরচ হচ্ছে? ৪.৫ লাখ, অবৈধভাবে যেতে। তারমানে এটাও মানব পাচারের রুট হয়ে গেছে। কি কারনে ইমিগ্রেশন থেকে ছাড়ে না এখন বুঝলাম। বাংলাদেশীদের যে কেউ কেন ভিসা দেয় না, এই হলো তার কারন। যেখানেই কেউ একটু সুযোগ দিবে, সেখানেই এরা মানব পাচারের রুট খুলে ফেলবে।


বিমান ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই খাবার দিল। ঠাণ্ডা বার্গার, কেক, কোক, পানি, আর প্রাণ ম্যাংগো বার। পেছন থেকে যাত্রীরা খাবার নিয়ে অভিযোগ জানাতে লাগল, এগুলো ডমেস্টিকের খাবার বলে।


এক ঘণ্টার মধ্যেই বিমান ল্যাণ্ড করল। বাইরের তাপমাত্রা ২১° সে.


নেপাল ইমিগ্রেশনে একটা বুথের সামনে আসা মাত্রই পাসপোর্ট কন্ট্রোল অফিসার বলল, আমার শিফট শেষ। সার্ভার থেকে লগ আউট হয়ে গেছে। ১০ মিনিট অপেক্ষা করেন। পরের অফিসার এসে করবে। ২০ টার মত বুথ। সবই ফাঁকা। অল্প কয়েকজন যাত্রী। পাশের বুথটায় অফিসার ফ্রী আছে দেখে চলে গেলাম। পাসপোর্ট আর বোর্ডিং কার্ড চাইল। টিকেট আর ভিসা প্রি-এ্যারাইভাল এ্যাপ্রুভালটাও সাথে দিলাম। একটাই মাত্র প্রশ্ন করল, কাঠমাণ্ডুতে কোন হোটেলে থাকবেন? হোটেল বুকিং কনফার্মেশনটা দিলাম, পোখারারটা সহ। দেখে ভিসা স্টিকার এবং সীল দিয়ে পাশের গেইটটা খুলে দিয়ে ওটা দিয়ে যেতে বলল।


ছিমছাম সুন্দর করে সাজানো একটা এয়ারপোর্ট। সামনে এগিয়েই একটা সিম বিক্রির বুথ আর মানি এ্যক্সচেঞ্জ। ঢাকা থেকে আসা প্যাসেঞ্জারে ভর্তি। সিমের দামের খবর নিয়ে মানি এ্যাক্সচেঞ্জের সামনে একজন স্টাফকে জিজ্ঞেস করলাম, সামনে আর মানি এ্যাক্সচেঞ্জ আছে কি না। ইশারায় বলল, আছে। একটু সামনে গিয়েই একটা মানি এক্সচেঞ্জ পেয়ে গেলাম। একদম ফাঁকা। ডলারের রেট ১৩০ রুপি, আর কোন কমিশন দিতে হবে না - মনিটরে লেখা ইশারায় দেখাল। ২০ ডলার এ্যক্সচেঞ্জ করলাম মাত্র, ১৩০ রুপি রেটে, সিম কেনা আর থামেল যাওয়ার ট্যাক্সি ভাড়ার জন্য। কারন এয়ারপোর্টে রেট সব সময় কম হয় জানি।


সামনে এগিয়ে গিয়ে এনসেল অপারেটরের নিজস্ব একটা বুথ পেলাম। তারা বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনিত কারনে ২০ মিনিটের আগে সীম এ্যাকটিভ করে দিতে পারবে না। সেই বুথে বেশ কিছু বাংলাদেশী কাস্টমার অপেক্ষায় বসে ছিল। সেখান থেকে প্রথমকার ভীরের বুথটাতেই ফিরে এলাম। এটা এনসেলের নিজস্ব বুথ না - এজেন্ট। তাদের কাছ থেকেই পাসপোর্টের কপি আর এক কপি ছবি দিয়ে সীম কিনলাম। ১৫ দিন মেয়াদ, ২৫ জিবি ডাটা, আর ৬০ মিনিট টকটাইম - ৭০০ রুপি। ছবি না থাকলে আরো ৫০ রুপি বেশি দিতে হবে।


সামনে এসে প্রিপেইড ট্যাক্সির বুথগুলোতে জিজ্ঞেস করলাম। থামেল যাওয়ার ভাড়া চাইলো ৮৫০/- রুপি ফিক্সড। 


ব্যাগেজ এরিয়াতে ঢুকার আগে আরেকবার সিকিউরিটি চেকের মধ্য দিয়ে যেত হলো।


বের হওয়ার আগে অপেক্ষমান দর্শনার্থীদের বসার জায়গাটা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। এরা বোধ হয় টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকেছে। কারন বাইরেও দেখলাম লোকজন আমাদের মতই জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে।


পাঠাও এ্যাপ ডাউনলোড করে নিয়েছিলাম আগেই। নেপালের নাম্বার দিয়ে আবার রেজিষ্ট্রেশন করলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে পার্কিং এরিয়াতে এসে আর বের হওয়ার জায়গা খুঁজে পাইনা। বরাবর একটা গেইটে আসলাম, সেটা বন্ধ। পিছনে ফিরে এসে রাস্তা দিয়ে বের হতে চাইলাম। পুলিশ বলল, এখান দিয়ে যাওয়া যাবে না। ঐপাশে গেইট। পরে দেখি একটা মার্কেটের মধ্য দিয়ে ছোট করে এক্সিট সাইন দেয়া। দারুন বিভ্রান্তিকর! কার পার্কিং এ ট্যাক্সিওয়ালারা থামেলের ভাড়া চাইলো ১,২৫০ রুপি।


বৃষ্টি কিছুটা কমেছিল। মেইন রোডে আসতেই আবার মুশলধারে বৃষ্টি। একটা যাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নিলাম। পাঠাওয়ে কল দিয়ে ফেলেছিলাম ট্যাক্সির জন্য আসতে আসতেই। থামেল ৪৫০ রুপি। এবার আমি আর ড্রাইভার বৃষ্টির মধ্যে অন্ধকারে কেউ কাউকে খুঁজে পাই না! ফোনে ১৫ মিনিট গেল। তারপর যাত্রীছাউনিতে বসে থাকা একজন নেপালির কানে আমার ফোনটা জোর করে গুজে দিয়ে বললাম, লোকেশনটা একটু ড্রাইভারকে বুঝিয়ে বলতে। সেও মিনিট পাঁচেক চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিল। এবারে অবশ্য গাড়িটা পাওয়া গেল, আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সামনে এসেছে। ড্রাইভার বিরাট খেপে আছে! নাম্বার প্লেটটা নেপালী ভাষায় হলেও সহজ নাম্বার ৮৮০৮ হওয়ায় আন্দাজ করে তাকে খুঁজে পেলাম। পুরনো ছোট্ট একটা মারুতি অলটো গাড়ি।


২৫ মিনিটের মত লাগলো থামেল আসতে। বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় নামিয়ে দিল, কারন হোটেলটা গলির ভিতরে। ৪৫০ রুপি ভাড়া + ৫০ রুপি বকশিশ দিয়ে হাঁটা ধরলাম ভিজতে ভিজতে। করোনার আগে ডেনমার্কের ছোট্ট শহর হারনিং ভ্রমনের কথা মনে পড়ল। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে বিরান এক বাস স্টপে ড্রাইভার ডাবল-চেক করে নামিয়ে দেয় মুশলধারে বৃষ্টি আর তুফানের মত বাতাসে, হিমাংকের নীচে তাপমাত্রায়। ভিজতে ভিজতে বিশাল একটা সুটকেস নিয়ে অন্ধকারে হাইওয়ে ক্রস করে আরো ৫০০ মিটার সামনে এসে খুঁজে পাই আমার বিএনবি। মনে হয়েছিল ৫ কি.মি.। যেই পাঁচ দিন ছিলাম, ননস্টপ বৃষ্টি ছিল একই রকম। শহরটা পর্যন্ত ঘুরে দেখতে পারিনি। এখানে অবশ্য পরশু থেকে বৃষ্টি থামবে দেখাচ্ছে ওয়েদার এ্যাপে। আগামীকাল সারাদিন কাঠমাণ্ডু ঘুরার প্ল্যানটা মাঠে মারা যাবে মনে হচ্ছে। পরশুদিন চলে যেতে হবে পোখারা।


হোটেলে চেক-ইন করলাম। ডবলরুমের বুকিং দিয়েছিলাম আগোডায় (১,৯৮০ রুপি)। বলল, ডবলরুম শুধু নীচ তালায় আছে। নীচ তালায় থাকবো না, দোতালায় খালি নেই। তিন তালায় রুম পেলাম। টুইন রুম। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রুম এবং টয়লেট, কিন্তু রুমে একদম আলো নেই। সিলিং ফ্যানও নেই, ওয়াল ফ্যান একটা দুই খাটের জন্য। রুমের ভেতর থেকে বন্ধ করার জন্য কোন ছিটকিরি নেই। বাইরে করিডোরে কোন সিসি ক্যামেরাও না! বাসায় ফোন দিয়ে পৌঁছানোর খবর জানালাম।


বের হয়ে আগে ছাতা কিনলাম। ৬০০ রুপি দাম চাইলো। ৩০০ বললাম। বলে একটা ছাতাতে ৫০% ডিসকাউন্ট হয়! লাস্ট দাম ৫০০। ৪০০ বলাতে দিয়ে দিল।


এবার বিসমিল্লাহ হালাল রেস্টুরেন্টের দিকে হাঁটা দিলাম। আসার আগে থামেলে দু'টা হালাল রেস্টুরেন্ট আছে দেখে রেখেছিলাম। গুগল ম্যাপ ধরে দশ মিনিট হেঁটে রেস্টুরেন্টে এসে দেখি কোন কাস্টমার নেই। ভাবলাম বন্ধ হয়ে গেছে বোধ হয়। কাউন্টারের লোকজন বলল, খোলা আছে। ভিতরের কোনায় একজন মাত্র নেপালী মহিলা কাস্টমার। চমৎকার পরিবেশ। খাবার অর্ডার দিলাম, হাফ চিকেন তান্দুরি (৫০০ রুপি) + বাটার নান (৮০ রুপি) + পানি ১ লিটার (৬০ রুপি)। পরে গাজরের হালুয়া অর্ডার দিলাম (২০০ রুপি) - প্রচন্ড মিষ্টি, খাওয়ার অযোগ্য। বাকি খাবারগুলো অবশ্য ভালো ছিল, যদিও সব তেলে জবজবা। মোট ৮৪০ রুপি বিল + ৬০ রুপি টিপস = ৯০০ রুপি ডিনার (৭৪৫ বাংলাদেশী টাকা)। 


রেস্টুরেন্ট স্টাফদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দিলাম অনেকক্ষণ। এদের মালিক বলছিল আমাকে আগে দেখেছে কোথাও। বললাম, আমার কমন ফেইস, সবারই চেনা চেনা লাগে। সে কাতারে ছিল, অবশ্য আমি চলে আসার অনেক পরে। বাংলাদেশ, কাতার, নেপাল নিয়ে অনেক্ষণ আড্ডা হলো। 


পানি বাইরে এসে আরেক লিটার কিনলাম আমার হোটেলের পাশ থেকে - ৫০ রুপি। গায়ের দাম লেখা মাত্র ১৬ রুপি!


খেয়েদেয়ে হোটেলে এসে ফেইসবুক পোষ্ট লিখতে বসলাম আজকের বাকি দিনের ঘটনা। অর্ধেক আগে লিখেছিলাম। বেডের পাশের সকেটটা লুজ। মোবাইল চার্জ দেয়া যাচ্ছে না। পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে চার্জ দিলাম। ওয়াইফাইও কাজ করার মত না। আমারতো প্রতিদিনই কাজ করতে হবে। ভেবেছিলাম রুমটা চেঞ্জ করে এখানেই আরেক রাত থাকব। এখন দেখছি কালকে হোটেল চেঞ্জ করা ছাড়া উপায় নেই। 


ডলার যা এ্যাক্সচেঞ্জ করেছিলাম, সব শেষ। শুধু ৫০ রুপি আছে। ৯ টার আগে কেউ দোকান খুলবে না, কাজেই খুব ভোরে কালকে বের হওয়ার উপায় নেই। ব্রেকফাস্টটা হোটেলে ইনক্লুডেড, এটাই রক্ষা। টায়ার্ড লাগছিল। রাতও হয়ে গেছে অনেক। ঘুম দিলাম।

র' হাসান এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত 

No comments

Theme images by Michael Elkan. Powered by Blogger.